Uncategorized

বাদশা নুর উদ্দিন জেঙ্গির জিবনী ও বাস্তব ইতিহাস

বাদশা নুর উদ্দিন জেঙ্গির জিবনী ও বাস্তব ইতিহাস

ইসলামের ইতিহাসে কিছু অকোতভয় বীর রয়েছে যাদের পুরো জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর জন্য।যুগ সংস্কারক, বাইতুল মুকাদ্দাস পুনঃ উদ্ধারের নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা মুসলিম শাসকদের মধ্যে অন্যতম হলেন নুরুদ্দিন জঙ্গী রহিমাহুল্লাহু তায়ালা। তিনি এমনই এক আদর্শ মানব যাকে আল্লাহ তা’আলা ইনসাফের সাথে রাষ্ট্র চালানোর দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দান করেছিলেন।

তার সমকালে পৃথিবীতে স্মরণীয় বরনীয় বহু মুসলিম শাসকের সমাবেশ ছিল। তাদের ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করার মত অবদান ছিল। কিন্তু আল আকসা কে মুক্ত করার জন্য তার মতো তৎপর ও স্বপ্নদ্রষ্ট্রা কাউকে দেখা যায়নি আসুন আমরা সেই মহান প্রতিভাবান,প্রভাবশালী শাসকের সংক্ষিপ্ত জীবনী জেনে নেই।

★নুর উদ্দিন জেঙ্গির জন্ম ও বংশ পরিচয়: তূর্কের জঙ্গি রাজবংশের শেষ শাসক, বাইতুল মুকাদ্দাসের পুন:উদ্ধারের স্বপ্নদ্রষ্টা, নূরউদ্দিন আবুল কাসিম মাহমুদ ইবনে ইমাদউদ্দিন এই মহামানবের জন্ম ১১১৮ ফেব্রুয়ারী মাসে। তিনি ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত জঙ্গী রাজবংশীয় শাসক। ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের সিরিয়া প্রদেশ শাসন করেছেন। তিনি ১১৪৬ থেকে ১১৭৪ সাল পর্যন্ত ২৮ বৎসর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁকে দ্বিতীয় ক্রুসেডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসাবে গণ্য করা হয়।

★ নুর উদ্দিন জেঙ্গির ইচ্ছা ও স্বপ্ন পূরন: ফোরাত এবং নীল নদের মধ্যবর্তী সব মুসলমানকে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ করে রাখার নিরন্তর প্রয়াস ছিল নূর উদ্দিনের। মিশর জয়ের পর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে এক করা ও বাইতুল মুকাদ্দাস পুনরায় উদ্ধার করে মুসলমানদের হস্তগত করা-ই নূর উদ্দিনের স্বপ্ন ছিল যা অর্জনের জন্য সারা জীবন তিনি জিহাদ করে গেছেন।

পরবর্তীতে তার এই স্বপ্ন প্রিয় শাগরেদ সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী রহঃ সমাপন করেছিলেন। তিনিই ছিলেন জেরুজালেম বিজেতা ও ক্রুসেডারদের দাম্ভিক মস্তিস্ক চূর্ণকারী সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর অভিভাবক, তিনিই আইয়ুবীকে জিহাদের ময়দানে এনেছেন।

★ নুর উদ্দিন জেঙ্গীর বাবার মৃত্যু বরন ও ক্ষমতা লাভ: উল্লেখ্য, নূর উদ্দিনের বাবা সিরিয়ায় ক্রুসেডারদের প্রবল প্রতিপক্ষ ছিলেন এবং এরই অংশ হিসেবে তিনি নিহত হন। তিনি ছিলেন বাবার দ্বিতীয় সন্তান।বাবার হত্যাকাণ্ডের পর নূর উদ্দিন ও তার বড় ভাই সাইফ উদ্দিন নিজেদের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করে নেন এবং নূর উদ্দিন আলেপ্পোর শাসনভার গ্রহণ করেন।এবং তার ভাই সাইফ উদ্দিন গাজি মসুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আল-খাবুর নদীকে দুটি নতুন রাজ্যের মধ্যে সীমান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।

★ এই মহান বীরের বিবাহ : বাদশাহ নুরউদ্দীন ক্রুসেডার শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলিম ফ্রন্টকে শক্তিশালী করার জন্য উত্তর ইরাক ও সিরিয়ায় তার মুসলিম প্রতিবেশীদের সাথে জোট করার চেষ্টা করেছিলেন। ১১৪৭ সালে, তিনি দামেস্কের গভর্নর মুইন উদ্দিনের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি মুইন উদ্দীনের মেয়ে ইসমত উদ্দীন খাতুনকে বিয়ে করেন।

★ নুর উদ্দিন জেঙ্গী ও ক্রুসেডর : বাদশাহ নূর উদ্দিন ছিলেন অদম্য, সাহসী, রাজনৈতিক কূূটনৈতিকশীল,ও প্রজ্ঞাবান, ক্ষমতা লাভ করার পরই ক্রুসেডারদের ঘাঁটি প্রিন্সিপালিটি অব অ্যান্টিয়ক আক্রমণ করেন এবং সিরিয়ায় বেশকিছু ঘাটি দখল করেন। এবং মুসলিমদের শক্তি-বৃদ্ধির লক্ষ্যে উত্তর ইরাকের প্রতিবেশীদের সঙ্গে মৈত্রি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের সপ্তম লুই ও জার্মানির তৃতীয় কনরাডের ক্রুসেড বাহিনীকেও তিনি পরাজিত করে দেন। তার নেতৃত্বে ব্যাটল অব ইনায়ে মুসলিম বাহিনী ক্রুসেডার বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। ১১৫০ সালে তিনি দ্বিতীয় জুসেলিনকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। তার সময়ে চারদিকে ইসলামের জয়জয়কার ছিলো।

ফোরাত এবং নীল নদের মধ্যবর্তী দেশগুলোকে একতাবদ্ধ করে রাখার একান্তই ইচ্ছা ছিল তার। তিনিই ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের এক বীর সেনানী,জেরুজালেম বিজেতা ও ক্রুসেডদের পরাজিত করে আল- আকসাকে মুক্তকারী সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর পিত্যতূল্য অবিভাবক যার হাত ধরে সংগ্রামের ময়দানে আইয়ূবীর পথচলা।

★ রাসুলুল্লাহ সাঃ এর লাশ কর্তৃক ইহুদিদের ষড়যন্ত্র – সুলতান নুরুদ্দিন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরেকটি ঘটনার জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত। ঘটনা হলো- ৫৫৫হিজরিতে মদীনা মোনাওয়ারার রওজা শরীফে দূর থেকে মাটি খুঁড়ে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর দেহ মোবারক গুম করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল দুই অভিশপ্ত, বর্বর, ইহুদি অপহরণকারী। সুলতান নুরুদ্দীন মাহমুদকে রাসূলুল্লাহ (সা:) স্বপ্ন যোগে এ ষড়যন্ত্রের খবর জানান।

তিনি বিচলিত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে এক বাহিনীসহ দ্রুত মদীনায় পৌঁছেন এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দুই ইহুদিকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে হত্যা করে তাদের লাশ আগুনে জ্বালিয়ে দেন। অবশেষে রাসুল (সঃ) রওজা মুবারককে অনেক নিচ পর্যন্ত সিসা দ্বারা ঢালাই করে দেওয়া হয়। এছাড়াও তার ইসলামের কল্যান ও জনহিতকর অসংখ্য কাজের অমর স্মৃতি রয়েছে। তার স্বপ্নের ও আইয়ুবীর ঘাম আর মুজাহিদের লাহুর নাযরানা’র বাইতুল মাকদিস। আজ ইহুদিরা সেই বাইতুল মুকাদ্দাস দখল করে বসে আছে। আজ ইসলামী বিশ্বে নুর উদ্দিন ও তার যোগ্য উত্তরসূরীর মতো সাহসী বীর মুজাহিদদের বড়ই অভাব।

★ওয়াফ নামক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্টা : নুরুদ্দিন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খুব বেশি বেশি মীলাদ শরীফ ও মাহফিল করতেন এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ( সাঃ) পালনের জন্য সকল ব্যবস্থা করেছিলেন। মানুষ যেন ভালোভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ সাঃ ও মাহফিল করতে পারে সে জন্য তিনি “ওয়াফ” নামক একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষকে খাবার, ফল-ফলাদি, কাপড় ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বিলি করতেন যেন সবাই স্বাচ্ছন্দে ঈদে মিলাদে হবীবুল্লাহ সাঃ উৎসব পালন করতে পারেন।

★মহান রবের ডাকে সাড়া : তুরস্কের জঙ্গি রাজবংশের শেষ শাসক,সুদীর্ঘ ৫২-বছরের বর্ণাঢ্যও কর্ম মুখর জীবন যাপনের পর ইসলামের বীর সেনানি, ইতিহাসের এক সমর নায়ক, আল – আদিল, আল – মালিক নূর উদ্দিন জঙ্গি ১১৭৪ সালের ১৫ মে সিরিয়ার দামেস্কে শাহাদাত বরন করেন। মানব জীবনে মৃত্যু এক অবধারিত সত্য। প্রতিটি মানুষকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।

আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে বলেন (প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।সুরা আলে- ইমারান -১৮৪) বাদশা নুরুদ্দিন জঙ্গির মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক কিন্তু তিনি জাতির অভিভাবক তুল্য একজন মহা মানব। তাই তার মৃত্যুতে সমগ্র জাতি গভীরভাবে শোকাভিভূত হয়েছিলেন। বাদশা নুরুদ্দিন জঙ্গি পুরোটা জীবন ক্রুসেডের বিরুদ্ধে জিহাদ, সংগ্রাম, আন্দোলন করে কাটিয়ে দিয়েছে তিনি সাধারণ মানুষের সেবায় জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। Read History in English

বহুমুখী প্রতিবার অধিকারী এই বাদশা নুরুদ্দিন জঙ্গি একজন সাচ্চা ও সুন্নী মুসলমান, চিন্তা চেতনায় যেমন ইসলামী দর্শন লালন করেছেন তেমনি কর্মে আচার-আচরণ – রাজ্য শাসন,ও ইবাদত বন্দেগিতেও কঠোরভাবে ইসলামের বিধান পালন করতেন। পৃথিবীর জন্ম মৃত্যুর চিরন্তন নিয়মে বাদশাহ নুরুদ্দিন জঙ্গি রহঃ এমন এক জগতে চলে গেছেন সেই জগতের বাসিন্দা আমাদেরও হতে হবে একদিন। পরম করুনাময় আল্লাহ দরবারে আমরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করত্ব জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করি। আমিন। ইয়া রাব্বাল আলামীন

–লেখক মুফতি সাজিদুর রহমান

আরো ইতিহাস এবং জিবনী পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button